টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে ফাঁস হলো ভুয়া শহীদের নাম
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
২৬-০৭-২০২৫ ০৫:১৯:০৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৬-০৭-২০২৫ ০৫:১৯:০৯ অপরাহ্ন
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাসির উদ্দিনের করা আবেদন। ছবি : সংগৃহীত
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে অংশ না করেও শহীদের তালিকায় নাম ওঠে পটুয়াখালীর খলিশাখালি গ্রামের বশির সরদার (৪০) নামের এক ব্যক্তির। পরে সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান পেয়ে তা ভাগাভাগি নিয়ে পরিবারে দ্বন্দ্ব শুরু হলে ফাঁস হয়ে যায় ভুয়া শহীদ ঘোষণার পুরো ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩ জুলাই পটুয়াখালী শহরের চৌরাস্তা এলাকায় পায়ে লোহার টুকরো ঢুকে আহত হন বশির সরদার। এরপর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর তার পরিবার দাবি করে, বশির ওই বছরের জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছিলেন এবং তাকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। এরপর বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে তাকে শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করানো হয়।
শহীদ ঘোষণার পর বশিরের পরিবার সরকার ও বিভিন্ন উৎস থেকে মোট ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা সহায়তা পায়। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। এছাড়া জেলা পরিষদ থেকে দুই লাখ টাকা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এককালীন দুই লাখ টাকা এবং ঈদ ও কোরবানি উপলক্ষে আরও এক লাখ টাকাসহ মোট তিন লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পায় পরিবারটি।
তবে এই অনুদান বণ্টন নিয়ে পরিবারে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। নিহতের বড় ভাই নাসির সরদার মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার ভাই কোনো আন্দোলনে অংশ নেননি এবং আহত হওয়ার ঘটনাটি ছিল নিছক দুর্ঘটনা। সরকারি অর্থ পাওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে শহীদের মর্যাদা আদায় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বশির সরদারের বড় ভাই নাসির সরদার বলেন, ‘শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে আমরা ভুল করেছি। ভুল তথ্য দিয়ে আমার ভাইকে শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিয়েছি। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে জেলা প্রশাসক ও এনডিসি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের ডাকে গিয়ে আমরা সব কিছু স্বীকার করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল এবং তার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়। এ কারণে আমরা পরিবার হিসেবে চরম আর্থিক সংকটে পড়ি ও ঋণগ্রস্ত হয়ে যাই। তখন সরকারি সহায়তার আশায় আমরা ওই তালিকায় নাম তুলেছিলাম। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে পরিবারে কী পরিমাণ টাকা এসেছে, সে বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই। শুধু এটুকু জানি, সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছিল, যেটি জেলা প্রশাসক স্যার ব্যাংকে চিঠি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন।’
নাসির সরদার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্ত্রী এখন আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। তিনি বাপের বাড়িতে থাকেন। কোথা থেকে কত টাকা পেয়েছেন, কী করেছেন সে বিষয়ে আমাদের কিছুই জানান না। আমাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে।’
পটুয়াখালী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সজিবুল ইসলাম সালমান বলেন, ‘সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বশিরের পরিবার ২০ লাখ ১০ হাজারের মতো টাকা পেয়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করায় শুধু সরকারের অর্থ অপচয়ই হয়নি, প্রকৃত শহীদদের মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, ‘আমরা একটি সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি, বশির সরদার আসলে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত হননি বরং এর এক মাস আগেই পটুয়াখালীতে একটি দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান। পরে সেই আঘাত থেকেই তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি জানার পর আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং কথোপকথনের একপর্যায়ে পরিবার স্বীকার করে যে, বশির সরদার কোনো আন্দোলনে অংশ নেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই স্বীকারোক্তির পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে চিঠি দিয়ে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র স্থগিত করার নির্দেশনা পাঠাই। একইসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাই, যেন এই পরিবারকে শহীদ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।’
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স